শুক্রবার, ১৩ মে ২০২২, ০১:৫২ অপরাহ্ন
স্বাধীন বাংলা দলের সুরুজের জীবন লড়াই
স্বাধীন বাংলা দলের সুরুজের জীবন লড়াই
শরীরে এখন যুদ্ধ করার সেই প্রাণশক্তি নেই, মনোবলও নিঃশেষ হওয়ার পথে। ক্ষয়ে যাওয়া মনের জোরের অবশেষ নিয়েই লড়াই করছেন । ‘দু-দুইবার’ মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার গৌরব যাঁর, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সেই ফুটবলার এখন রোগাক্রান্ত শরীর নিয়ে সবার দোয়াপ্রার্থী, ‘রক্ত-রোগে ভুগছি আমি, এভারকেয়ারে চিকিৎসা চলছে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।’
১৯৭১ সালে এই তরুণ অসীম সাহসে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। তাঁর কাছেই জানা, দুইবার মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার কাহিনি। প্রথমবার মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিতে গিয়েছিলেন ভারতে। সেখানে ১৫ দিনের ট্রেনিং শেষে গোলাবারুদ নিয়ে সাতক্ষীরার শ্যামনগর হয়ে নদীপথে বরিশালে ফিরতে গিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণের শিকার হন। ওই এলাকার শান্তিরক্ষী বাহিনী তাঁদের ২১ জনকে আটক করলেও পরে তিনি পালিয়ে বাঁচেন সাবেক চিফ হুইফ আ স ম ফিরোজের সঙ্গে। একবার জীবন পাওয়া সুরুজ ২২ দিন পর আবার দ্বিতীয় যুদ্ধের জন্য রওনা হয়েছিলেন ভারতে, ‘২২ দিন পর আবার আগরতলা দিয়ে ভারতে ঢোকেন অস্ত্রযোদ্ধা হিসেবে নয়, স্বাধীন বাংলা দলের হয়ে ফুটবল খেলার জন্য। এটা আমার দ্বিতীয় যুদ্ধ, আর এটাই জীবনের শ্রেষ্ঠ গৌরব।’
রক্ত-রোগে ভুগছি আমি, এভারকেয়ারে চিকিৎসা চলছে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।
ঐতিহাসিক দলের হয়ে সাতটি ম্যাচ খেলা বরিশালের এই ফুটবলার স্বাধীন দেশে বেশিদিন ফুটবল খেলেননি। মোহামেডান-আবাহনীর জার্সিতে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত খেলে এই ডিফেন্ডার ফিরে যান নিজের বাড়ি বরিশালে। এরপর ভালোই কাটছিল জীবন, সংসারে খুব প্রাচুর্য না থাকলেও কখনো সুখের অভাব হয়নি।
বছর দুয়েক আগে হঠাৎ তাঁর সুখের শরীর বিগড়ে যায়। কমতে থাকে রক্তের হিমোগ্লোবিন। সেবার তড়িঘড়ি করে ভারতে গিয়ে চিকিৎসা করিয়েছিলেন সুরুজ, ‘দুই বছর আগে এই রোগটা একবার হয়েছিল আমার, দিল্লিতে গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে এসেছিলাম। এরপর কিছুদিন ভালো ছিলাম। এখন আবার একই সমস্যা ধরা পড়েছে। হিমোগ্লোবিন কমে ছয়ের নিচে নেমে এসেছে। তাই আট দিন ধরে এভারকেয়ারে চিকিৎসা নিচ্ছি, এক দিন পর পর ইঞ্জেকশন নিতে হয়। আরো কয়েক দিন থাকতে হবে হাসপাতালে।’ তাঁকে নিয়ে পরিবারের সবাই খুব চিন্তিত। তবে মানুষের দোয়া মাথায় নিয়ে লিকলিকে শরীরের সুরুজ এখনো লড়ে যাচ্ছেন জীবনের শেষ যুদ্ধে।
মন্তব্য